ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসা বন্ধ পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু গাজীপুরে উদ্ধার মাগুরার সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাক্তার দেখাতে না পেরে রোগীদের বিক্ষোভ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিমুখী চিকিৎসকদের পদযাত্রায় বাধা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো পুলিশ যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা শিক্ষকদের পুলিশের জলকামান-লাঠিচার্জ এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না আজ সারাদেশে ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ডাক ইসি কর্মীদের ওআইসিভুক্ত মিশন প্রধানদের কাছে ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরবেন সিইসি প্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’ পুলিশের জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার উদ্যোগ ১৫ বছরের নিচে কেউ হজে যেতে পারবে না আবাসন ব্যবসায়ীদের দুর্দিন কাটছে না যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইউক্রেন আলোচনায় বসবো না যা ইচ্ছা করুন মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে কিল সুইচ
বাণিজ্যিক উৎপাদন আগামী বছর

পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগ

  • আপলোড সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:২০:২৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:২০:২৯ পূর্বাহ্ন
পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগ
উৎপাদন নিষিদ্ধ হলেও দেশে প্রায় তিন হাজার কারখানায় দৈনিক এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিন উৎপাদিত হচ্ছে। আর সহজলভ্য হওয়ায় এটি অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করছে মানুষ। আগে বাজার করার সময় সবাই বাজারের থলে নিয়ে বের হতো। এখন কারও হাতে বাজারের থলে চোখে পড়ে না। মুদিদোকান থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, শাকসবজি, ডিম, তরকারি, ফল ও মিষ্টির দোকান, যেকোনো পণ্য কিনতে গেলেই দোকানি পলিথিনে সব পণ্য দেয়। যদিও পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছিল ২০০২ সালে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি দেখলে এখন কেউই বুঝবে না যে পলিথিন নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় আবারও ১ অক্টোবর থেকে সুপার শপগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে যুগ যুগ ধরে পলিথিন ব্যবহারে অভ্যস্ত মানুষ বিকল্প হিসেবে কী ব্যবহার করবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এজন্য অনেকে বলছেন পাটজাত সেলুনুজ থেকে তৈরি পরিবেশ দূষণকারী পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের কথা। তবে এ ব্যাগ এখনো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায়নি। জানা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে পাটের ব্যাগ তৈরির কাজ। পাট থেকে পরিবেশবান্ধব সোনালি ব্যাগ উৎপাদনের টেকসই পদ্ধতি বিস্তৃতির জন্য পৃথক কারখানা স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। পাটের বহুমুখী ব্যবহারের ক্ষেত্র প্রসারে এই কারখানায় পাট থেকে পরিবেশবান্ধব পচনশীল যৌগিক পলিমার তৈরি করে সোনালি ব্যাগসহ বিভিন্ন মোড়ক সামগ্রী তৈরি করা হবে। পরিবেশবান্ধব পচনশীল মোড়ক সামগ্রী উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে অর্জন করা হবে বৈদেশিক মুদ্রা। এক কেজিতে গড়ে ১০০ ব্যাগ করা যায়। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৫ টন সোনালি ব্যাগ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ খান ২০১৬ সালে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে সেলুলোজ প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশবান্ধব সোনালি ব্যাগ আবিষ্কার করেন। পরে তাকে বিজেএমসির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ড. মোবারক আহমদ খান গত ২৮ আগস্ট সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সোনালি ব্যাগের নমুনা হস্তান্তর করেন। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পাট দিয়ে তৈরি সোনালি ব্যাগ দেশের পাটের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখবে। তিনি বলেন, সোনালি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব। এ ব্যাগের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সোনালি ব্যাগ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিশ্বের প্যাকেজিংয়ের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। এ ব্যাগ বহুল ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওই বৈঠকের পরই নড়েচড়ে বসে বিজেএমসি। তারা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ‘পাট হতে পরিবেশবান্ধব সোনালি ব্যাগ উৎপাদনের টেকসই পদ্ধতি বিস্তৃতীকরণের লক্ষ্যে পাইলট কারখানা স্থাপন’ প্রকল্পের একটি প্রস্তাব পাঠায়। সেপ্টেম্বরের শেষে ওই প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১০০ কোটি টাকা। ব্যাগ তৈরির শুরু থেকে তিন বছরেই এই টাকা ব্যয় করা হবে। বিজেএমসির মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা মো. নাসিমুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সাল থেকেই আমরা বাণিজ্যিকভাবে সোনালি ব্যাগ তৈরি করতে পারবো। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের পাইলট প্রকল্পও শেষ হয়েছে। ১০০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর আওতায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হবে সোনালি ব্যাগ তৈরির কাজ। প্রকল্পের আওতায় ৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি, ১৯ কোটি টাকার রাসায়নিক পদার্থ, সাড়ে ১৩ কোটি টাকার কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ কেনা হবে। এ ছাড়া গবেষণাগার সরঞ্জামাদি, ভবন ও স্থাপনা, পরামর্শকের সম্মানী, শ্রমিক ও আউটসোর্সিং খাতে ব্যয় করা হবে। বর্তমানে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ব্যাগের ৪০ শতাংশই একবার ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিকের তৈরি ব্যাগ অপচনশীল হওয়ায় তা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। এই প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে বেড়ে যায়, যা পরিবেশের অন্যতম ক্ষতির কারণ। প্লাস্টিকের ব্যাগ শুধু পরিবেশ নয়, মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। ইতোমধ্যে মানবদেহে মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজেএমসি জানায়, ২০০২ সালে আমাদের দেশে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এর পরিবেশবান্ধব কোনো বিকল্প না থাকায় কার্যকরভাবে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ঢাকা শহরে বিভিন্নভাবে ক্রমাগত প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পরিবেশ দূষিত হওয়াসহ মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস, বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি ও নতুন রোগের সৃষ্টি, পলিথিন জমে জলাবদ্ধতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবেশের দূষণ কমাতে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের সেলুলোজ থেকে তৈরি এ সোনালি ব্যাগ ব্যবহৃত হতে পারে। ব্যাগটি বাহ্যিকভাবে পলিব্যাগের মতো দেখালেও এটি মাটিতে সম্পূর্ণ পচনশীল এবং পানিতে দ্রবণীয়। এটি খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের কাজেও ব্যবহার করা যায়। আগুনে পুড়লে ছাই হয়ে যায় কিন্তু বিষাক্ত কোনো গ্যাস তৈরি করে না। সোনালি ব্যাগের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া, এটি প্রয়োজনে রিসাইক্লিং করে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করাও সম্ভব। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এককভাবে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত এবং সফল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হলে, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একইভাবে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী ও উদ্বুদ্ধ হবেন। প্রকল্পটি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব হবে বিধায় ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। পাটচাষিরা পাটের ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং অধিকহারে পাট উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। ফলে সার্বিকভাবে কৃষক পর্যায়ে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বিভিন্নভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স